আজ বাংলা চলচ্চিত্রের মিষ্টি মেয়ে কবরীর জন্মদিন। তিনি চেয়েছিলেন আমৃত্যু সিনেমার সঙ্গেই থাকতে। চলচ্চিত্রের বরেণ্য অভিনয়শিল্পী কবরী মারা যাওয়ার আগপর্যন্তও যুক্ত ছিলেন সিনেমার কাজে। ‘এই তুমি সেই তুমি’ সিনেমার কাজ করছিলেন তখন। শেষটা আর করে যাওয়া হয়নি তাঁর।
২০২১ সালের ১৭ এপ্রিল প্রয়াত হন কবরী। যদি আজ তিনি বেঁচে থাকতেন, দেশের নানা প্রান্তে তাঁকে নিয়ে হতো অনুষ্ঠান, টেলিভিশনে থাকত বিশেষ আয়োজন, সংবাদমাধ্যমে দেওয়া হতো সাক্ষাৎকার। কারণ, এটি তাঁর জীবনের ৭৫তম জয়ন্তী। তবে কবরী না থাকলেও তাঁর জন্মদিনকে ঘিরে আয়োজন থেমে থাকেনি। কবরী বেঁচে আছেন সিনেমায়। কবরীর জন্মের ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে তিন দিনব্যাপী চলচ্চিত্র উৎসবের আয়োজন করেছে চ্যানেল আই।
জানা গেছে, ১৯ থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত চলবে এ আয়োজন। কবরীর অভিনীত তিনটি চলচ্চিত্র প্রথম দিন মাসুদ রানা, পরদিন বধূ বিদায় এবং শেষ দিন বিনিময় প্রচার করা হবে। প্রতিদিন থাকবে কবরী অভিনীত ছবির গান নিয়ে বিশেষ পরিবেশনা ‘এবং সিনেমার গান’। ২০ জুলাই বিকেল ৫টা ৫০ মিনিটে প্রচারিত হবে আবদুর রহমানের গ্রন্থনা ও উপস্থাপনায় কবরীর সাক্ষাৎকারভিত্তিক অনুষ্ঠান ‘সাময়িকী’। পরদিন দুপুর ১২টা ৫ মিনিটে অভিনেত্রী কবরীর ৫০ বছরের অভিনয়জীবন নিয়ে চিত্রনায়িকা মৌসুমীর উপস্থাপনায় প্রচারিত হবে বিশেষ অনুষ্ঠান ‘অভিনেত্রীর পঞ্চাশ বছর’।
১৯৫০ সালের ১৯ জুলাই চট্টগ্রামের বাঁশখালীতে জন্ম কবরীর। প্রকৃত নাম মিনা পাল। বাবা শ্রীকৃষ্ণদাস পাল, মা লাবণ্যপ্রভা পাল। মাত্র ১৩ বছর বয়সে নৃত্যশিল্পী হিসেবে মঞ্চে ওঠেন তিনি। এরপর আসেন টেলিভিশনে, তারপর সিনেমায়। ১৯৬৪ সালে মাত্র ১৪ বছর বয়সে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ান প্রথমবার। ছবির নাম সুতরাং, পরিচালক ও নায়ক হিসেবে ছিলেন সুভাষ দত্ত। ১৯৭৫ সালে নায়ক ফারুকের সঙ্গে সুজন সখী সিনেমা তাঁকে এনে দেয় তুমুল জনপ্রিয়তা। হয়ে উঠেছিলেন বাংলা চলচ্চিত্রের ‘মিষ্টি মেয়ে’।
পাঁচ দশকের দীর্ঘ অভিনয়জীবনে শতাধিক ছবিতে অভিনয় করেছেন কবরী। কবরী বাংলাদেশের একমাত্র অভিনেত্রী, যাঁর বিপরীতে অভিষেক হয়েছিল পাঁচ নায়কের। ফারুক, জাফর ইকবাল, আলমগীর, উজ্জ্বল ও সোহেল রানা।
কবরী অভিনীত উল্লেখযোগ্য ছবিগুলোর মধ্যে আছে ‘সুতরাং’, ‘হীরামন’, ‘নীল আকাশের নীচে’, ‘ময়নামতি’, ‘সারেং বউ’, ‘দেবদাস’, ‘সুজন সখী’, ‘পারুলের সংসার’, ‘রংবাজ’, ‘বধূ বিদায়’, ‘আগন্তুক’, ‘বাহানা’ ও ‘তিতাস একটি নদীর নাম’।
শুধু অভিনেত্রী হিসেবে নন, কবরী ছিলেন একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। জড়িয়ে পড়েছিলেন রাজনীতিতেও। ২০১৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর আত্মজীবনীমূলক বই ‘স্মৃতিটুকু থাক’। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, মেরিল-প্রথম আলো পুরস্কার, ঋষিজ পদকসহ দেশে-বিদেশে অসংখ্য সম্মাননা। পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে আজীবন সম্মাননাও।
আপনার মতামত লিখুন :