binodonerpadmaful
ঢাকা সোমবার, ২০ মে, ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

নবীনগরে নতুন জাতের সোনালি আভায় স্বপ্ন বুনছে কৃষক


বিনোদনের পদ্মফুল | মো. শওকত আলী মে ৩, ২০২৪, ০৩:০২ পিএম নবীনগরে নতুন জাতের সোনালি আভায় স্বপ্ন বুনছে কৃষক

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার হাওর বেষ্টিত অন্যতম বৃহত্তম উপজেলা নবীনগর। চলতি মৌসুমে বোরো আবাদ হয়েছে ১৮১০০ হেক্টর। গত বছরের তুলনায় বোরো আবাদ বেড়েছে ১০০ হেক্টর। রছুল্লাবাদ ইউনিয়নের লহরী গ্রামে প্রথমবারের মতো বিএডিসি সৌর সেচ ব্যবস্থা চালু হওয়ায় এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রণোদনা কার্যক্রমের সহায়তায় ১৫০ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে প্রথমবারের মতো। তাছাড়া লাউরফতেহপুর ইউনিয়নের টানচড়ায় আশ্রয়নের অধিবাসীদের মাধ্যমে বিলের পতিত জমিতে বোরো আবাদ হয়েছে ৭০ বিঘা নতুন করে।
আগাম বন্যার প্রভাব এড়াতে হাওরের কৃষকদের পছন্দ স্বল্পকালীন জাতের ধান। এই অঞ্চলে কৃষকদের পছন্দের অন্যতম জাত ছিলো ব্রিধান ২৮ এবং ব্রিধান ২৯। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, গত তিন বছর ধরে উল্লিখিত জাত দুটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ায় ছত্রাকজনিত নেক ব্লাস্ট রোগের প্রভাবে সহস্রাধিক কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কৃষি বিভাগ চলতি মৌসুমের শুরুতে ব্লাষ্ট রোগ দমনে করণীয় ব্যবস্থাপনা নিয়ে মাঠ দিবস, কৃষক প্রশিক্ষণ, উঠান বৈঠক এবং দশ হাজার লিফলেট বিতরণ করে। ফলে ব্রিধান ২৮ এবং ব্রিধান ২৯ আবাদে অনাগ্রহী হয় কৃষক। বিএডিসি এবং স্থানীয় বীজ উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে ব্রিধান ২৮ এবং ব্রিধান ২৯ জাত বাজারজাতকরণে নিরুৎসাহিত করা হয়। কৃষক পর্যায়ে উন্নতমানের ধান, গম এবং পাট বীজ উৎপাদন, সংরক্ষণ এবং বিতরণ প্রকল্পের সহায়তায় বারোটি বীজ উৎপাদন গ্রুপের মাধ্যমে উৎপাদিত হয় ৬০ মেট্রিক টন ব্রিধান ৮৮, ব্রিধান ৯৬, ব্রিধান ৮৯, ব্রিধান ৯২ এবং বঙ্গবন্ধু ধান ১০০। উপজেলা কৃষি প্রণোদনা এবং পুনর্বাসন কার্যক্রমের আওতায় ৫০০০ জন কৃষকদের মাঝে দেওয়া হয় ব্রিধান ৮৯, ব্রিধান ৯২, ব্রিধান ৯৬ এবং বঙ্গবন্ধু ধান ১০০ জাতের বীজ এবং সার। উচ্চ ফলনশীল হাইব্রিড ধানের বীজ দেওয়া হয় ৪১৫০ জন কৃষকের মাঝে। তাছাড়া পার্টনার এবং ফ্রীপ প্রকল্পের আওতায় প্রথমবারের মতো আবাদ করা হয় লম্বা চিকন এবং বাসমতী টাইপ উচ্চ ফলনশীল বিনাধান ২৫। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট পার্টনারের অংশের মাধ্যমে সমগ্র নবীনগর জোড়ে  ৭৫টি স্থানে ২২৫ বিঘা জমিতে প্রথমবারের মতো আবাদ করা হয় ব্রিধান ১০১, ব্রিধান ১০২, ব্রিধান ১০৪, ব্রিধান ১০৫ এবং ব্রি হাইব্রিড ধান ০৮। সরেজমিন পরিদর্শনে প্রতিটি ধানের মাঠে ভালো ফলন দেখা যায়। উল্লেখ্য যে, ছয়টি জাতই এই উপজেলা তথা এই অঞ্চলে নতুন।
ইব্রাহিমপুর ইউনিয়নের বিনাধান ২৫ আবাদকারী কৃষক কাউছার বলেন, ধানটি অনেক চিকন এবং লম্বা অনেক কুশি হয়েছে আশাকরি অনেক ভালো ফলন পাবো।
জাফরপুর গ্রামের কৃষক আবু নাঈম বলেন, কৃষি অফিসের মাধ্যমে ব্রিধান ১০৫ জাতের প্রদর্শনী পেয়েছি। জাতটি ডায়বেটিক ধান নামে পরিচিত হওয়ায় অনেক মানুষের আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছি। পুরো জমির ধান বীজ হিসেবে রাখবো। আগামীতে এটি ছড়িয়ে দিবো।
ভোলাচং গ্রামের কৃষক প্রদীপ পাল জানান, ব্রিধান ১০৪ প্রথমবারের মতো আবাদ করছি। জমিতে আসলেই সুঘ্রাণে মাতোয়ারা হয়ে যাই। বোরো মৌসুমে সুগন্ধি চাল আমাদের জন্য নতুন। পর্যাপ্ত কুশি হয়েছে, প্রতিটি কুশিতে অনেক ধান। লম্বা, চিকন এবং সুগন্ধি হওয়ায় সবার মধ্যেই আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে।
চুওরিয়া গ্রামের কৃষক জজ মিয়া বলেন, মাঠে যতগুলো ধান আছে সবচেয়ে ভালো ধান হবে ব্রিধান ১০২। এখন পর্যন্ত যা অবস্থা আশাকরি বিঘা প্রতি ৩০ থেকে ৩২ মন ধান পাবো। রোগবালাই নাই বললেই চলে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, বোরো মৌসুমে নবীনগর উপজেলায় প্রথমবারের মতো আবাদ হয়েছে নতুন যে ছয়টি উচ্চ ফলনশীল জাত আবাদ হয়েছে। নমুনা শস্য কর্তনে প্রতিটি জাতের ফলন অত্যন্ত আশাব্যঞ্জক। উল্লিখিত জাতগুলোর মধ্যে ব্রিধান ১০১ যা ব্রিধান ২৮ জাতের এবং ব্রিধান ১০২ জাতটি ব্রিধান ২৯ জাতের বিকল্প হিসেবে আবাদ উপযোগী। অন্যদিকে বিনাধান ২৫ জাতটি চিকন এবং লম্বা এবং ব্রিধান ১০৪ জাত দুটি চিকন লম্বা এবং বাসমতী টাইপ সুগন্ধী চাল অন্যদিকে ব্রিধান ১০৫ জাতটিতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্সের মাত্রা ৫৫ নিচে থাকায় ডায়বেটিক ধান হিসেবে অবহিত করা হচ্ছে। কৃষক পর্যায়ে উল্লিখিত জাতগুলোর বীজ সংরক্ষণের জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে ড্রাম দেওয়া হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা আগামী মৌসুমে ১৫০০ হেক্টর জমিতে জাত গুলো সম্প্রসারণের। উল্লিখিত জাতগুলো যত দ্রুত সম্প্রসারিত হবে কৃষক তথা দেশের সামগ্রিক খাদ্য উৎপাদনের জন্য নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ মো. জাহাঙ্গীর আলম লিটন বলেন, উচ্চ ফলনশীল নতুনজাতগুলো রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এবং হেক্টর প্রতি ফলন অনেক বেশি, তাছাড়া জলবায়ু সহিষ্ণু। আমরা নতুন জাত সম্প্রসারণে সবসময়ই কৃষকদের প্রণোদনা এবং প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপকরণ সহায়তা দিয়ে থাকি।

Side banner