কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে চলতি আমন মৌসুমে জমিতে ধানের আবাদ করেননি অনেক কৃষক। উপজেলার বিভিন্ন এলাকার এসব কৃষকের পরিকল্পনা ছিল ধান আবাদ না করে জমিতে আগাম শীতকালীন সবজি চাষের। পরিকল্পনা মাফিক করেছেন মুলা, লাউ, শসা, বেগুনসহ বিভিন্ন শীতকালীন শাক সবজি চাষ। ভালো ফলন ও দামে লাভবান হবেন এমন স্বপ্ন ছিল তাদের। তবে ভারী বৃষ্টিতে খরিপ-২ মৌসুমে ফসল ও শীতকালীন আগাম সবজি চাষিদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বৃষ্টিতে স্বপ্নভঙ্গের শঙ্কা কৃষকদের।
ফুলবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৫০ হেক্টর জমিতে কৃষকরা বিভিন্ন শাক সবজি আবাদ করেছেন। ভারী বৃষ্টিতে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নিরুপণে মাঠ পর্যায়ে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
উপজেলার চন্দ্রখানা গ্রামের কৃষক হামিদুর রহমান খন্দকার বলেন, এক বিঘা জমিতে আগাম মুলা ও বেগুনের চাষ করেছিলাম। খেতে চারা রোপণ ও বীজ বপনের একমাস পেরিয়ে গেছে। ক্ষেতের অবস্থা মোটামুটি ভালো ছিল। ভালো ফলনের পাশাপাশি আগাম শাকসবজি চাষ করে লাভের স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টিতে আমার স্বপ্ন ভেসে গেছে। ক্ষেত একেবারেই বিধ্বস্ত হয়েছে। লাভের স্বপ্ন নিয়ে আবাদ করে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে।
একই এলাকার কৃষক হাফিজুর রহমান বলেন, তিন বিঘা জমিতে লালশাক ও মুলা আবাদ করেছি। এতে আমার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ইতোমধ্যে ১০ হাজার টাকার লালশাক বিক্রি করেছি। খেতের মুলা বিক্রি করে অন্তত সত্তর থেকে আশি হাজার টাকা লাভের আশা করেছিলাম। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আমার সে আশা ভঙ্গ হয়েছে। লাভ তো দূরের কথা এখন খরচের টাকাও উঠবে কিনা সেই চিন্তাই করছি।
উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের পূর্ব ধনিরাম গ্রামের কৃষক আলমগীর হোসেন বলেন, আমি ১৬ শতাংশ জমিতে পটল, ২৪ শতাংশ জমিতে শসা এবং ৪৮ শতাংশ জমিতে বেগুন চাষ করেছি। বৃষ্টিতে পটল ও শসা খেতের মোটামুটি ক্ষতি হয়েছে। বেগুন খেত নিয়েও চিন্তায় আছি। এরকম বৃষ্টির পরে বেগুন খেত টিকে থাকবে কিনা শঙ্কায় আছি।
এদিকে জেলার রাজারহাট কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র সরকার জানান, সোমবার দুপুর ১২ টার আগের ২৪ ঘন্টায় জেলায় ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আগামী ২৪ ঘন্টায় জেলায় বিক্ষিপ্তভাবে হালকা বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে বলে পূর্বাভাসে জানান তিনি।
সোমবার দুপুরে উপজেলার বড়ভিটা ইউনিয়নের ধনিরাম এলাকা পরিদর্শনে আসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন, অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা রাফিকা আক্তার ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা আব্দুল্লাহ আল মামুন। এসময় উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, ভারী বৃষ্টি আর উজানের ঢলে পানিতে নিমজ্জিত ফসলের বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে খেতের পরিচর্যায় কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি বৃষ্টি ও উজানের ঢলে ফসলের ক্ষয়ক্ষতির পরিমান নির্ধারণে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :