ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলা সদর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে অধ্যক্ষ নজরুল নগর ইউনিয়ন। এই ইউনিয়নের মাঝের চর বাজার নুরানি ও হাফিজিয়া মাদরাসার মাঠ মাটি দিয়ে ভরাটের জন্য গত অর্থবছরে কাবিটা কর্মসূচির আওতায় বরাদ্দ ছিল ছয় লাখ ৭৭ হাজার টাকা। গত ৬ আগস্ট ওই গ্রামে সরেজমিনে গেলে এই নামে কোনো মাদরাসার অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। তবে মাঝের চর বাজারে অন্য নামের দুটি মাদরাসা রয়েছে। সেগুলোর মাঠ ভরাটের জন্যও কোনো প্রকল্পের কাজ হয়নি। নিয়ম অনুসারে, ৩০ জুনের মধ্যে ‘কাজ শেষ করা হয়েছে’ দেখিয়ে বিল উত্তোলন করা হয়েছে।
জানা গেছে, চরফ্যাশন উপজেলায় গত অর্থবছরে টিআর, কাবিটা ও কাবিখা কর্মসূচির আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পে নামমাত্র কিছু কাজ করা হলেও বেশির ভাগ কাজই হয়নি। বরাদ্দকৃত অর্থ কাজ না করে আত্মসাৎ করা হয়েছে।
চরফ্যাশন উপজেলার নুরাবাদ ইউনিয়নে দুলারহাট মহিলা দাখিল মাদরাসার মাঠ ভরাটের জন্য টিআর প্রকল্পের তিন লাখ পাঁচ হাজার ৭৫০ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি এই মাদরাসায় গিয়ে মাঠ ভরাটের কোনো আলামত দেখা যায়নি। মাদরাসার সহসুপার মাওলানা মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, তাঁদের মাদরাসার মাঠ ভরাটের কোনো কাজ করা হয়নি।
একই অবস্থা উপজেলার নুরাবাদ পূর্ব চর তোফাজ্জল আসলামিয়া দাখিল মাদরাসায়। সেখানে মাঠ ভরাটের জন্য টিআর কর্মসূচি থেকে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছিল তিন লাখ পাঁচ হাজার ৭৫০ টাকা।
মাদরাসার সুপার মাওলানা আবু তাহের জানান, মাদরাসার মাঠ স্থানীয় লোকজন ঈদগাহ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। আগে থেকেই মাঠটি পাকা করা অবস্থায় রয়েছে। মাঠ ভরাটের কাজ হয়নি।
স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, চরফ্যাশনে টিআর, কাবিটা ও কাবিখা কর্মসূচির আওতায় ২১৭টি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছিল। এর মধ্যে ওমরপুর, আছলামপুর, নুরাবাদ, নীলকমল, নুরাবাদ, অধ্যক্ষ নজরুল নগর ইউনিয়নের ২০টি প্রকল্প এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, কোথাও আংশিক কাজ করা হয়েছে। বেশির ভাগ স্থানে কাজই করা হয়নি। এসব প্রকল্পে দুর্নীতি-অনিয়মের প্রতিবাদে উপজেলার নুরাবাদ ও আহমেদপুর ইউনিয়নে গত ২৯ ও ৩০ জুলাই স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জি এম ওয়ালিউল ইসলাম জানান, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও সময় স্বল্পতায় চরফ্যাশন উপজেলায় ২১টি ইউনিয়নে সব প্রকল্পের কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া বালুর সংকট থাকায় পাশের উপজেলা থেকে বেশি দামে বালু কিনে আনতে হয়েছে। তাই ৩০ জুনের মধ্যে প্রকল্পের অর্থ তুলে ব্যাংকে রেখে দেওয়া হয়েছে। প্রকল্পের কাজ শেষ না হওয়া পর্যন্ত কাউকে পূর্ণাঙ্গ বিল দেওয়া হবে না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসনা শারমিন মিথি বলেন, এসব প্রকল্পে মূলত সিপিসি-কমিউনিটি প্রজেক্ট কমিটি কাজ বাস্তবায়ন করে থাকে। সিপিসি কাজ বাস্তবায়ন না করলে মামলাও করা যায়। অর্থ আত্মসাতের দুর্নীতির প্রমাণ মিললে অর্থ পুনরুদ্ধারের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টি আমরা বিবেচনা করছি।
আপনার মতামত লিখুন :