ঘড়ির কাঁটার সঙ্গে সঙ্গে বদলে যায় ক্যালেন্ডারের পাতা। থেমে থাকে না ভূরাজনীতির হিসাব-নিকাশও। তারই অংশ হিসেবে এবার বদলে গেল রাশিয়ার সঙ্গে অন্যান্য দেশগুলোর অবস্থান, শত্রুতা কিংবা মৈত্রীর সংজ্ঞা। দীর্ঘ ১৩ বছর এমনই এক বড় পরিবর্তন ধরা পড়েছে দেশটির এক জনমত জরিপে। সেখানে উঠে এসেছে, আমেরিকা এখন আর রাশিয়ানদের সবচেয়ে বড় শত্রু দেশ নয়। তার জায়গা নিয়েছে ইউরোপের আরেক প্রভাবশালী দেশ জার্মানি।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাশিয়ার স্বাধীন জনমত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘লেভাদা সেন্টার’ প্রকাশিত এক জরিপে এই তথ্য উঠে এসেছে। এক প্রতিবেদনে রুশ সংবাদমাধ্যম মস্কো টাইমস এ তথ্য জানায়।
জরিপের তথ্যমতে, মাত্র ৪০ শতাংশ রুশ এখন যুক্তরাষ্ট্রকে প্রধান শত্রু মনে করে। গত বছরের তুলনায় যা ৩৬ শতাংশ কম। এই পরিবর্তনের পেছনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তন এবং ইউক্রেন যুদ্ধ ইস্যুতে হোয়াইট হাউজের কূটনৈতিক উদ্যোগকে কারণ হিসেবে দেখছে সংস্থাটি।
জরিপ অনুযায়ী, এখন সবচেয়ে বড় শত্রু দেশ হিসেবে রাশিয়ার ৫৬ শতাংশের চোখে জার্মানি। এরপরই ৪৯ শতাংশের চোখে যুক্তরাজ্য এবং ৪৩ শতাংশের কাছে ইউক্রেন।
এর আগে, ২০২২ সালের আগে জার্মানিকে শত্রু মনে করত মাত্র ১৬ শতাংশ রুশ। কিন্তু চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্জ দায়িত্ব নেওয়ার পর ইউক্রেনকে অস্ত্র সহায়তা বাড়ানো এবং মস্কোর অভ্যন্তরে হামলার সক্ষমতা রাখে এমন ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহের হুমকি পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তোলে।
এ ছাড়া জরিপে রাশিয়ার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র বা বন্ধু হিসেবে যেসব দেশের নাম এসেছে, সেগুলো হলো- বেলারুশ (৮০ শতাংশ), চীন (৬৪ শতাংশ), কাজাখস্তান (৩৬ শতাংশ), ভারত (৩২ শতাংশ) ও উত্তর কোরিয়া (৩০ শতাংশ)।
এর মধ্যে বেলারুশ ও চীনের সঙ্গে রাশিয়ার অর্থনৈতিক ও সামরিক জোটবদ্ধতা দীর্ঘদিনের। ভারত ও কাজাখস্তানও ব্রিকস ও ইউরেশিয়ান সংস্থাগুলোর মাধ্যমে মস্কোর ঘনিষ্ঠ অংশীদার। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি রাশিয়ার সামরিক এবং কূটনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
প্রসঙ্গত, লেভাদা সেন্টার গত ২২ থেকে ২৮ মে পর্যন্ত ১ হাজার ৬শ’ ১৩ জন রুশ প্রাপ্তবয়স্কের মধ্যে এই জরিপটি পরিচালনা করে। এই জরিপের ফলাফল শুধু জনমতের পরিবর্তন নয়, বরং রাশিয়ার ভবিষ্যৎ পররাষ্ট্র নীতির একটি আভাসও দেয়। ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রতি ক্রমবর্ধমান সন্দেহ এবং এশীয় মিত্রদের প্রতি আস্থা বাড়ানো রাশিয়ার কৌশলগত অবস্থানকে নতুন করে চিহ্নিত করছে।
আপনার মতামত লিখুন :