binodonerpadmaful
ঢাকা সোমবার, ১৬ জুন, ২০২৫, ২ আষাঢ় ১৪৩২

ইসরায়েলের অর্ধশতাধিক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত


বিনোদনের পদ্মফুল | আন্তর্জাতিক ডেস্ক জুন ১৬, ২০২৫, ০১:১৯ এএম ইসরায়েলের অর্ধশতাধিক ভবন ধ্বংসস্তূপে পরিণত

ইসরায়েলের ভয়াবহ হামলার জবাবে ইরানের দ্বিতীয় দিনের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ধ্বংসস্তূপে রূপ নিয়েছে দখলদার দেশটির অনেক ভবন। এসবের নিচে চাপা পড়েছে বহু ইসরায়েলি। সেখানে তৎপরতা চালাচ্ছে উদ্ধারকর্মীরা। এ পর্যন্ত ১৪ জন নিহতের পাশাপাশি কয়েকশ ইসরায়েলি আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
শনিবার (১৪ জুন) রাতে ইরানের ছোড়া ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মধ্যে একটি আঘাত হানে ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলের শহর বাট ইয়ামের একটি আবাসিক ভবনে। এতে অন্তত সাতজন নিহত হয়। আহত হয় আরও শতাধিক ইসরায়েলি। এছাড়া এখনও নিখোঁজ রয়েছে বেশ কয়েকজন। এদিন স্থানীয় সময় রাত আড়াইটার পরপর তেহরানের পক্ষ থেকে চালানো হামলার কারণে ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে সাইরেন বেজে ওঠে। জীবন বাঁচাতে তেল আবিব, মধ্যাঞ্চল, আশদোদ শহর এবং জেরুজালেমের অনেক এলাকার বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে যান।
পরে বাট ইয়াম শহর ছাড়াও রেহোভোট ও রামাত গানে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়। বাট ইয়ামে নিহত সাতজনের মধ্যে আট বছরের একটি মেয়ে, ১০ বছরের একটি ছেলে এবং ১৮ বছরের এক তরুণ রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে সাতজন এখনো নিখোঁজ রয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডিএফ) হোম ফ্রন্ট কমান্ডের সার্চ অ্যান্ড রেসকিউ ব্রিগেডের সেনারা রবিবার সকালেও ধ্বংসস্তূপের নিচে নিখোঁজদের উদ্ধারে সন্ধান চালান বলে জানিয়েছে দেশটির সেনাবাহিনী।
এ এলাকার বাসিন্দা রিবাট ভাকনিন চ্যানেল ১২ নিউজকে বলেন, আমার বাবা নিখোঁজ রয়েছেন। তিনি সময়মতো নিরাপদ আশ্রয়ে (বোম্ব শেল্টার) যেতে পারেননি। আমার ভাই তাকে আনতে ঘরে ঢুকেছিল। তখন বিস্ফোরণ ঘটে। ভয়ানকভাবে সবকিছু কাঁপতে থাকে।
গিমেল নামের ৫০ বছর বয়সী এক নারী স্থানীয় সংবাদমাধ্যম ওয়াইনেটকে বলেন, আমি সাইরেনের শব্দ শোনার পর বোম্ব শেল্টারে যাওয়ার কথা ভাবছিলাম। কিন্তু প্রথমে দৌড়ে বাথরুমে যাই। আমি দুটি বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শুনি, ভেবেছিলাম এটা শেষ হয়েছে। পরে যখন শুনলাম উত্তর দিকে চার নারী নিহত হয়েছেন, তখনই হঠাৎ আমার মাথার ওপর সবকিছু ভেঙে পড়লো। পুরো ছাদ ধসে পড়লো।
তিনি আরও বলেন, আমার মনে হচ্ছিল আমি মারা যাচ্ছি। আমি নিচে নিরাপদ আশ্রয়কক্ষের দিকে গিয়ে দেখি সেটি বন্ধ ছিল। কিন্তু তখন রক্তে ভাসতে থাকা একজন প্রতিবেশীকে দেখতে পাই। আমি তখন আমার মা বাবার কথা ভাবছিলাম, যারা শেল্টারে যেতে পারেননি।
পাশের সড়কের বাসিন্দা বারুচ বলেন, আমি আমার জীবনে এমন কিছু দেখিনি। ছয় দিনের যুদ্ধের সময় গোলান মালভূমিতে আমি লড়াই করেছিলাম, কিন্তু সেখানে এমন কিছু ঘটেনি। বোমার শক্তি দেখে আমি সত্যিই ভয় পেয়েছিলাম।
বাট ইয়ামের মেয়র টিভিকা ব্রোট এক বিবৃতিতে বলেছেন, শনিবার রাতের হামলায় ৬১টি ভবন কোনো না কোনোভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে ছয়টি ভবন পুরোপুরি ধ্বংস হয়েছে।
ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় রেহোভোটে অন্তত ৪২ জন আহত হয়েছে, তাদের মধ্যে গুরুতর আহত হয়েছে ২ জন। 
দেশটির জরুরি চিকিৎসা পরিষেবা সংস্থা মেগান ডেভিড আদম (এমডিএ) এ তথ্য জানিয়েছে। সেখানে ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে থাকা এক ব্যক্তিকে উদ্ধারকর্মীরা বের করে আনার আগ পর্যন্ত তিনি বেঁচে ছিলেন।
ইউনাইটেড হাটজালাহ রেসকিউ সার্ভিসেসের স্বাস্থ্যকর্মী গোলান লেভি ওয়ালা নিউজ সাইটকে বলেছেন, এ এলাকার একটি ভবনে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে যারা আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে দেড় বছরের এক শিশু ও তার মা রয়েছেন। এ ছাড়া অনেকের হাত-পা ভেঙে গেছে, কারও রক্ত ঝরছে। সবাই আতঙ্কগ্রস্ত ও ভয় পেয়ে চিৎকার করছিলেন। এই এলাকা পুরোনো হওয়ায় এখানকার বেশির ভাগ বাড়িতে বোম্ব শেল্টার নেই।
রেহোভোটের ওয়াইজমান ইনস্টিটিউট ফর সায়েন্সের একটি ভবনও ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গেছে। শনিবার রাতে হাইফার পূর্বের তামারা শহরে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় চারজন নিহত হন।
এমন পরিস্থিতিতে নাগরিকদের প্রতি ক্ষেপণাস্ত্র আঘাত হানার স্থান ও ফুটেজ প্রকাশ না করতে আহ্বান জানিয়েছে ইসরায়েলের সামরিক বাহিনী। এসব ফুটেজ দেখে শত্রুরা তাদের হামলার সক্ষমতা বাড়াতে পারে বলে সতর্ক করেছে তারা।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল

Side banner