হার্টের অসুখ নিয়ে আলোচনা যতটা, তার ভয় আরো বেশি। বয়স যতই হোক না কেন বিশের কোঠার তরুণ থেকে শুরু করে ষাট পেরোনো বৃদ্ধ হৃদরোগের ঝুঁকি এখন সবার জন্যই প্রাসঙ্গিক। সাধারণত আমরা কোলেস্টেরল, উচ্চ রক্তচাপ বা ধমনি ব্লকেজের মতো বিষয়গুলোকেই হার্টের প্রধান শত্রু হিসেবে দেখি। কিন্তু এর বাইরেও আছে আরেক বিপজ্জনক উপাদান উচ্চ পটাসিয়াম বা হাইপারক্যালেমিয়া। যা নীরবে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
পটাসিয়াম শরীরের জন্য অপরিহার্য একটি খনিজ। এটি হৃদযন্ত্রের ইলেকট্রিক্যাল ছন্দ ঠিক রাখতে সাহায্য করে। তবে শরীরে এর মাত্রা সামান্য বেড়ে গেলেও সমস্যা হতে পারে। পটাসিয়ামের ভারসাম্যহীনতা থেকে অ্যারিথমিয়া (হৃদস্পন্দনের অনিয়ম), এমনকি হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট পর্যন্ত হতে পারে।
হঠাৎ পটাসিয়াম বেড়ে যায় কেন?
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, অনেকেই নিয়মিত কলা ও আলু খান, যা পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার। এই ফল ও সবজি খাওয়ায় কোনো সমস্যা নেই। তবে যাদের কিডনি সমস্যা, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ আছে, তাদের জন্য এটি হতে পারে বিপদের কারণ। কারণ শরীর থেকে অতিরিক্ত পটাসিয়াম বের করে দেওয়ার দায়িত্ব কিডনির, আর যদি কিডনি ভালোভাবে কাজ না করে, তাহলে পটাসিয়াম জমে যেতে পারে শরীরে।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
কিডনি রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিরা, বিশেষ করে ডায়াবেটিসজনিত কিডনি সমস্যায় ভোগা রোগীরা, উচ্চ রক্তচাপের রোগীরা, রক্ত পাতলা করার ওষুধ বা কিছু অ্যান্টিবায়োটিক গ্রহণকারী ব্যক্তিরা।
কোন খাবারে থাকে বেশি পটাসিয়াম?
কলা, আপেল, কমলালেবু, অ্যাভোকাডো, শাকসবজি, যেমন- পালং শাক, কুমড়া, বেগুন, শসা, আলু, মিষ্টি আলু, গাজর, ডাল-শিম-শুঁটিজাতীয় খাবার, এপ্রিকট এবং অন্যান্য শুকনো ফল।
করণীয় কী?
নিজে থেকে কখনো পটাসিয়াম সাপ্লিমেন্ট খাওয়া উচিত নয়। যদি আগে থেকেই কিডনি বা হৃদরোগ থাকে, তবে নিয়মিত রক্ত পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ডায়েট থেকে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বাদ দেবেন না, কিন্তু সচেতন থাকা ভালো। পটাসিয়ামসমৃদ্ধ খাবার কিভাবে ও কতটুকু খাবেন, তা চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নির্ধারণ করুন।
হাইপারক্যালেমিয়া এখনো অনেকের কাছেই অপরিচিত একটি শব্দ, কিন্তু এর প্রভাব হতে পারে ভয়ানক। হার্টের স্বাস্থ্যের যত্ন নিতে চাইলে শুধু কোলেস্টেরল নয়, পটাসিয়ামের দিকেও নজর রাখা জরুরি। কারণ, এই নীরব ঘাতক যে কখন ছোবল মারবে, তা বোঝার সুযোগ না-ও থাকতে পারে।
সূত্র : এবিপি বাংলা
আপনার মতামত লিখুন :