বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীর যেমন দুর্বল হতে থাকে, তেমনি কমে যেতে পারে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও। বিশেষ করে স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়া আজকাল অনেকেই অনুভব করেন। তবে কিছু নিয়ম মেনে চললে সহজেই স্মরণশক্তি ধরে রাখা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের স্মৃতিশক্তি শুধু জন্মগত নয়, তা নিয়মিত চর্চা ও সঠিক অভ্যাসের মাধ্যমে বজায় রাখা যায় দীর্ঘদিন। চলুন জেনে নিই, কোন অভ্যাসগুলো স্মৃতিশক্তি ধরে রাখতে সহায়ক:
১. নিয়মিত ‘ব্রেন গেম’ খেলুন
স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে ‘ব্রেন গেম’ বেশ কার্যকর। বুদ্ধি খাটিয়ে খেলার মতো গেম যেমন—পাজল, শব্দজট, দাবা, সাডোকু ইত্যাদি মস্তিষ্ককে সক্রিয় রাখে। ইন্টারনেটে নানা ধরনের ব্রেন গেম সহজেই পাওয়া যায়, যা প্রতিদিন অল্প সময় খেললেই উপকার পাওয়া সম্ভব।
২. পুষ্টিকর খাবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন
স্মৃতিশক্তি ঠিক রাখতে খাদ্যাভ্যাস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাতে রাখুন তাজা ফলমূল, গাঢ় সবুজ শাক-সবজি, ডিম, দুধ, মাছ, মাংস, গমের রুটি। বাদাম, তেলের বীজ ও ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার মস্তিষ্কের জন্য বিশেষ উপকারী। একইসঙ্গে যথেষ্ট পরিমাণ বিশুদ্ধ পানি পান করতে হবে। অতিরিক্ত লবণ ও চিনি এড়িয়ে চলাই ভালো।
৩. মানসিক চাপ কমান
চাপ ও দুশ্চিন্তা স্মৃতিশক্তির অন্যতম বড় শত্রু। কাজের চাপ, পারিবারিক টেনশন বা একাকীত্ব-এসব থেকে যতটা সম্ভব নিজেকে দূরে রাখুন। বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিন, হাসুন, মিশুন। কমিউনিটির নানা কাজে অংশ নিন। সামাজিক যোগাযোগ মস্তিষ্ককে চাঙ্গা রাখতে সাহায্য করে।
৪. পর্যাপ্ত ঘুম নিশ্চিত করুন
ঘুম কম হলে মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের প্রতিদিন অন্তত ৭-৯ ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। ৫ ঘণ্টার কম কিংবা ১০ ঘণ্টার বেশি ঘুম মস্তিষ্কের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। সঠিক ঘুম মানেই সতেজ মন ও সক্রিয় মস্তিষ্ক।
৫. লিখে রাখার অভ্যাস গড়ে তুলুন
মনে রাখার জন্য ‘লিখে রাখা’ অভ্যাস করুন। গবেষণায় দেখা গেছে, কিছু লিখলে তা অনেকদিন পর্যন্ত মনে থাকে। এছাড়া লেখার সময় মস্তিষ্কে রক্তপ্রবাহ বেড়ে যায়, যা স্মৃতিশক্তি উন্নত করতে সহায়ক। চাইলে ডায়েরি, নোটবুক বা ই-মেইলেও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো লিখে রাখুন।
৬. বাইরে হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন
শরীরচর্চা কেবল শরীর নয়, মস্তিষ্কের জন্যও উপকারী। প্রতিদিন কিছুক্ষণ বাইরে হাঁটুন। খোলা বাতাসে হাঁটার সময় মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বেড়ে যায়, যা মনোযোগ ও স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি করে। বিশেষ করে বয়স্কদের জন্য এটি অত্যন্ত উপযোগী।
৭. রুটিন চেকআপ করান
হৃদ্রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ কোলেস্টেরল-এইসব শারীরিক সমস্যাগুলো মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা হ্রাস করতে পারে। তাই নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো অত্যন্ত জরুরি। চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে এসব ঝুঁকিপূর্ণ রোগ।
স্মৃতিশক্তি শুধু বয়সের সঙ্গে হারিয়ে যায় না-সঠিক অভ্যাস, খাদ্য ও জীবনধারা মেনে চললে এটি দীর্ঘদিন অটুট রাখা সম্ভব। তাই আজ থেকেই শুরু হোক মস্তিষ্ক সুস্থ রাখার অভ্যাস।
আপনার মতামত লিখুন :