যে কোনো ট্যুর এর আগে যেই বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া উচিত সেটি হচ্ছে ক্লাইমেট কন্ডিশন। বিশেষ করে আপনি যা দেখতে চান তার সাথে যদি ক্লাইমেট কন্ডিশন জড়িত থাকে তাহলে তো দ্বিগুণ গুরুত্ব দেয়া আবশ্যক। যেমন কেউ যদি নর্দার্ন লাইট দেখতে চায় তাহলে তাকে অবশ্যই স্থান, মৌসুম এবং ক্লাইমেট কন্ডিশন সবকিছু মিলিয়ে প্ল্যান করতে হবে। নর্ডিক দেশে গেলেই যে অরোরা দেখা যাবে বিষয়টি এমন নয়।
একইভাবে বলিভিয়ার ফেমাস সালার দে উয়ুনীতে গেলেই যে এই ধরণের আয়না দেখা যাবে বিষয়টি এমন নয়। এই ধরণের আয়নার ইফেক্ট দৃশ্যমান শুধুমাত্র বছরের একটি নির্দিষ্ট সময়ে : আয়নার ইফেক্ট দেখতে হলে অবস্যই এমন সময়ে যেতে হবে যখন সেই অঞ্চলে বৃষ্টির মৌসুম মাত্র শেষ হয়েছে এবং ড্রাই সিজন এখনো শুরু হয়নি এমন মুহুর্তে। ড্রাই সিজনে গেলে এই পুরো জায়গাটি দেখে মনে হবে বিশাল বড় একটি বরফের মরুভুমি। যেহেতু এটা একটি সল্ট ফ্ল্যাট, ড্রাই সিজনে চতুর্দিকে শুধু লবণ দৃশ্যমান। কিন্তু লবণের পরিমাণ এতো বেশি যে দেখলে মনে হবে আসলে বরফ। সেটি এক ধরণের সৌন্দর্যতা বহন করে এবং সেই ধরণের সৌন্দর্যতাও দেখবার মত। তবে যদি আয়নার দৃশ্য দেখতে চান তাহলে সেটি আপনি ড্রাই সিজনে পাবেন না।
আবার বৃষ্টির মৌসুমে গেলেও পাবেন না, কারণ তখন ধারাবাহিক ভাবে বৃষ্টি হয় এবং অনেক সময় বৃষ্টির পরিমাণ এতো বেশি থাকে যে সেখানে যাওয়ায় সম্ভব হয় না। সুতরাং এই মৌসুমটি অবশ্যই এভোইড করা উচিত।
আয়নার ইফেক্ট দেখতে হলে এমন সময় যেতে হবে যে বৃষ্টি নেই, কিন্তু বৃষ্টির কিছু পানি এখনো জমা রয়ে গিয়েছে। এই মুহুর্ত দেখবার জন্য সেরা সময় হচ্ছে মার্চ, এপ্রিল ও মে মাস। ঠিক এই কারণেই আমি আমার সাউথ আমেরিকান ট্যুর এপ্রিল মাসে অর্গানাইজ করেছিলাম। যেহেতু এই সালার দে উয়ুনী দেখা ছিলো সাউথ আমেরিকা ট্যুর এর অন্যতম একটি উদ্দেশ্য তাই এমন ভাবেই প্ল্যান করেছি যে জায়গাটি আমার মত করে দেখা সম্ভব হয়।
এপ্রিল মাসে প্ল্যান করার পিছনে আরেকটি কারণ ছিলো এপ্রিলের আগে গেলে মাচু-পিকচুতেও বৃষ্টি হবার প্রবল সম্ভাবনা ছিলো, কারণ সেটি হচ্ছে পেরুর বৃষ্টির মৌসুম। এপ্রিলের পরে গেলে আবার আরেকটি সমস্যা ছিলো সেটি হচ্ছে চিলিতে, বিশেষ করে পাতাগোনিয়া তে উইন্টার শুরু হয়ে যেত এবং উইন্টার মৌসুমে পাতাগোনিয়া ট্রাভেল করা খুব কঠিন একটি বিষয়, অনেক হাইকিং ট্রেইল বন্ধ থাকে। যেহেতু পাতাগোনিয়াও ছিলো আমার ট্যুর এর অন্যতম একটি ডেস্টিনেশন তাই এমন সময় যেতে হতো যখন সেই জায়গা ট্র্যাভেল করা সম্ভব।
এই সব মিলিয়ে এপ্রিল মাসকেই বেছে নিয়েছিলাম ট্যুর এর জন্য কারণ এই মাসে ৩ টি জায়গাই সুন্দর মত ট্র্যাভেল করা সম্ভব ছিলো। কিন্তু এইভাবে অর্গানাইজ করার জন্য আমাকে অনেক স্টাডি করতে হয়েছে।
প্রতিটি দেশ ও অঞ্চলের আবহাওয়া গত ৫ বছর কেমন ছিলো, তাপমাত্রা কেমন ছিল, বৃষ্টির পরিমান কেমন ছিলো সবকিছু স্টাডি করে তারপর তারিখ গুলো নির্ধারণ করতে হয়েছে। এই ধরণের একটি ট্যুর অর্গানাইজ করতে হলে তার পিছনে কত পরিমাণ সময় ব্যায় করতে হয় এটা অনেকেই বুঝতে সক্ষম নয়। একমাত্র যারা ট্র্যাভেলার এবং নিজে নিজে সবকিছু অর্গানাইজ করে তারাই বুঝতে পারবে।
আপনার মতামত লিখুন :