binodonerpadmaful
ঢাকা রবিবার, ২০ জুলাই, ২০২৫, ৫ শ্রাবণ ১৪৩২

বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আর নেই


বিনোদনের পদ্মফুল | বিশেষ প্রতিনিধি জুলাই ২০, ২০২৫, ০৩:২০ পিএম বরেণ্য ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান আর নেই

দেশের বরেণ্য ভাস্কর ও চিত্রশিল্পী অধ্যাপক হামিদুজ্জামান খান আর নেই। রবিবার (২০ জুলাই) সকাল ১০টা ১০ মিনিটে রাজধানীর বেসরকারি একটি হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহ ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)।
হামিদুজ্জামান খান ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৭৯ বছর। তিনি স্ত্রী ভাস্কর আইভি জামান, দুই পুত্র ও দেশ-বিদেশে অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অধিকাংশ ভাস্কর্যই হামিদুজ্জামান খানের করা
হামিদুজ্জামান খানের পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ শিল্পী মনিরুজ্জামান জানান, ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁকে গত ১৫ জুলাই ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। অবস্থার অবনতি হলে গত তিন দিন থেকে তিনি নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে ছিলেন। সকালে চিকিৎসকেরা তাঁর লাইফ সাপোর্ট খুলে দেন।
বেলা আড়াইটায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তাঁর মরদেহ দীর্ঘদিনের কর্মস্থল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে নেওয়া হবে। সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বাদ আসর বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে নামাজে জানাজা হবে। দাফনের বিষয় কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাঁর প্রবাসী ছেলেদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে পারিবারিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের কটিয়াদি উপজেলার সহশ্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্র্যাফটস ( ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চারুকলা অনুষদ) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি নেন। পাঠ পর্ব শেষে তিনি ১৯৭০ সালে ঢাকা চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন। অধ্যাপক হিসেবে ২০১২ সালে অবসর গ্রহণের পর থেকে স্বাধীন ভাবে শিল্পচর্চা করে গেছেন।
ভাস্কর্য হামিদুজ্জামান খানের প্রধান শিল্পমাধ্যম হলেও তিনি জলরঙের ছবিতেও বিশেষ পারদর্শিতা অর্জন ও জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক অধিকাংশ ভাস্কর্যই তাঁর হাতে করা। নভেরা আহমেদের পরে যাঁদের হাতে দেশের আধুনিক ভাস্কর্য চর্চা বিকাশ লাভ করেছে তিনি ছিলেন তাঁদের অন্যতম প্রধান।
স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে তিনি জয়দেবপুর চৌরাস্তায় ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ ভাস্কর্য নির্মাণে কাজ করেন। এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রথম ভাস্কর্য। এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সার কারখানায় ‘জাগ্রত বাংলা’, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘সংশপ্তক’, ঢাকা সেনানিবাসে ‘বিজয় কেতন’, মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গণে ‘ইউনিটি’, কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে ‘ফ্রিডম’, উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’, আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্মকমিশন প্রাঙ্গণে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী’, মাদারীপুরে ‘এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম’ হামিদুজ্জামান খানের অন্যতম উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য।
হামিদুজ্জামান খান বিভিন্ন মাধ্যম ও ফর্ম নিয়ে নিরীক্ষাধর্মী কাজে আগ্রহী ছিলেন। তিনি ধাতু,কাঠ, সিরামিকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে নিরীক্ষাধর্মী অনেক ভাস্কর্য রচনা করেছেন। একটা পর্যায়ে ধাতব মাধ্যমে পাখির ভাস্কর্য সৃজনে মনোযোগী হয়েছিলেন। টিএসসি চত্বরে ধাতব মধ্যমে করা ‘শান্তির পায়রা’ সহ পাখি নিয়ে তাঁর অনেক ভাস্কর্য রয়েছে।
ভাস্কর্যের পাশাপাশি তিনি জলরঙের ছবিতেও বিশেষ পারদর্শী ছিলেন। তাঁর জলরঙের নিসর্গ, মানব মানবীর মুখাবয়ব ও নিরীক্ষাধর্মী কাজগুলো বিদগ্ধ মহলে খুবই সমাদৃত হয়েছে। দেশ-বিদেশে তাঁর ভাস্কর্য ও চিত্রকলার প্রায় অর্ধশত একক ও বহু যৌথ প্রদর্শনী হয়েছে।
হামিদুজ্জামান খান ২০০৬ সালে শিল্পকলায় অবদানের জন্য একুশে পদক পান। তিনি বাংলা একাডেমি ফেলো ছিলেন। এ ছাড়া দেশ বিদেশে বহু পুরস্কার ও সম্মাননা পেয়েছেন।

Side banner